ডিটেকটিভ স্পোর্টস ডেস্ক
সকালের সূর্য প্রায় সবসময় পুরো দিনের ইঙ্গিত দেয়। সারানাস্কিতে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের এইচ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে তেমনটাই ঘটল। প্রথমবারের মতো এশিয়ার দল জাপান হারিয়ে দিল শক্তিশালী কলম্বিয়াকে। ইয়াইয়া ওসাকোর দুর্দান্ত নৈপুণ্যের এই খেলায় ২-১ গোলের জয় দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শুরু করলো জাপান। এবং মঙ্গলবার এবারের আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দারুণ খেলেই জিতেছে তারা।
এই প্রথম বিশ্বকাপে কোনো এশিয়ান দল দক্ষিণ আমেরিকার দলকে হারালো। এমন ঐতিহাসিক কীর্তির জন্য জাপান তো গর্ব করতেই পারে। পুরো খেলায় তারাই বেশিরভাগ সময় মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছে। যদিও শুরুতেই একজন খেলোয়াড়কে হারিয়ে পিছিয়ে পড়ে কলম্বিয়া। তারপরও শক্তির বিচারে তারা অনেক এগিয়েই ছিল। তাছাড়া বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে কলম্বিয়া যেখানে ১৬ নম্বরে সেখানে জাপানের জায়গা ৬১ নম্বরে।
দারুণ শাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি ম্যাচের শুরুতেই। ৩ মিনিটে। হাত দিয়ে বল ঠেকিয়ে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেন কলম্বিয়ার কার্লোস সানচেজ। সময় নষ্ট হয়। ৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার শিনজি কাগাওয়া ঠাণ্ডা মাথায় স্পট কিক থেকে গোল করে জাপানকে উৎসবে মাতালেন। ১০ জনের কলম্বিয়া লড়ে যায়। এবং ৩৯ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে কুইনতেরো গোল করে কলম্বিয়াকে সমতায় ফেরান। ১-১ এর সমতা নিয়ে শেষ প্রথমার্ধ। এবং ওসাকোর গোলে ৭৩ মিনিটে আবার জাপান এগিয়ে যায়। এবং সেটি জয়ের গোল।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে আগের তিন দেখার একটিতেও জেতেনি জাপান। কিন্তু এবারের দেখায় শুরুতেই তারা ফ্রন্টফুটে। কলম্বিয়া ম্যাচের শুরুতেই ১০ জনের দলে পরিণত হয়েছে। ৬ মিনিটের সময় স্পট কিক থেকে জাপানের অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার শিনজি কাগাওয়া গোল করেছেন। ১-০ তে এগিয়ে উৎসবে মাতে জাপান। গোলরক্ষক ওসপিনাকে তার ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখার পরই সোজা শটে কাগাওয়া লিড এনে দেন।
কলম্বিয়ার চেয়ে জাপান পিছিয়ে থেকেই খেলতে নামে। কিন্তু তৃতীয় মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ জাপানের। গোলরক্ষক ওসপিনা চমৎকারভাবে ওসাকোর একটি শট ঠেকিয়ে দিলেন। কিন্তু সেটি গিয়ে কাগাওয়ার কাছে পৌঁছায়। তিনি জোরালো শট নেন। কার্লোস সানচেজ হাত দিয়ে গোল ঠেকানোর চেষ্টায় সফল! কিন্তু প্রতিপক্ষকে পেনাল্টি পাইয়ে দিয়ে তিনি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। তবে মাঠ ছাড়তে যথেষ্ট সময় নিলেন।
মরিয়া কলম্বিয়াকে কৌশল বদলাতে হয়। কিন্তু আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে জাপানকে। শুরুর দিকেই রাদামেল ফ্যালকাও একটি সুযোগ মিস করেছেন। আর একটু হলে নিজের দ্বিতীয় গোলটি পেতে পারতেন শিনজি। এভাবে চলতে থাকে। অবশ্য জাপানের পায়েই বল থাকে বেশি।
২০১২ সাল থেকে কলম্বিয়ার কোচ আর্জেন্টাইন হোসে পেকারমান। দেশটিকে বেশ সাফল্য এনে দিয়েছেন। ওখানে খুব জনপ্রিয়তাও। কৌশলের ফুটবলের জন্য তার নামডাক। সবাইকে বিস্মিত করে খেলার ৩১ মিনিটে মাঝমাঠের শক্তি বাড়াতে ২৪ বছরের বারিওসকে নামিয়ে দেন মাঠে। আর তুলে নেন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার কুয়াদরাদোকে।
এবং ৩৯ মিনিটে বড় ডি এর ঠিক বাইরে ফ্রি-কিক পায় কলম্বিয়া। সামনে দেয়াল। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হুয়ান কুইনতেরো ভিন্ন চেষ্টা করলেন। দেয়ালের খেলোয়াড়দের লাফিয়ে ওঠার জন্য সময় নিলেন। এরপর গড়ানো শট নিলেন ডানদিকের বারে। একে এক বিস্ময় গোলই বলতে হয়। গোলরক্ষক কাওয়াশিমা বলটা ধরলেন। দাবি করলেন, গোললাইন পার হয়নি বল। কিন্তু ততক্ষণে সমতা ফেরানোর স্বস্তিতে উদযাপনে মেতেছে কলম্বিয়া। গোল লাইন প্রযুক্তিও বলে দেয়, বেশ অনেকটা ভেতরে ঢুকেই গোলরক্ষক বল ধরেছেন।
খেলার ৫৪ মিনিটে কলম্বিয়ান কোচ পেকারমান আরেকটি বিস্ময় পরিবর্তনের জন্ম দেন। এবার ম্যাচে সমতা আনা হুয়ান কুইনতেরোকে তুলে নিলেন। আর একাদশে ছিলেন না যে বায়ার্ন মিউনিখের মহাতারকা ও গত বিশ্বকাপের বিস্ময় হামেস রদ্রিগেজ সেই তাকে নামিয়ে দেন মাঠে। একাদশে হামেসের না থাকার কারণ হিসেবে ইনজুরির কথা জানা গিয়েছিল আগে।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে জাপানের খেলার ধার যেন আরো বেড়ে যায়। তাদের অভিজ্ঞ কোচ আকিরা নিশিনো কি মন্ত্র দিয়েছেন কে জানে! ওসাকো গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেন। কিন্তু হয় না। তবে আক্রমণ চলতে থাকে এবং জাপানীদের দ্বিতীয় সাফল্যটা আসে ৭৩ মিনিটে ফরোয়ার্ড ওসাকোর মাথা থেকেই। হোন্ডার বাঁ দিক থেকে নেওয়া কর্নারে বল উড়ে আসে ডান দিকেই। ওখানে ওসাকো হেড করেন। গোলরক্ষক ওসপিনা বাছাই পর্বে বেশ কিছু ভুল করেছেন। এবারো করলেন। নিজের জায়গা বুঝতে ভুল করেছেন। ওসাকোর গোলে ২-১ এ লিড নিয়ে কলম্বিয়ার বিপক্ষে প্রথম জয়ের সুবাস পেতে থাকে জাপান। এবং শেষ পর্যন্ত দুর্ধর্ষ এক জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে তারা।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে এর আগে ৩ ম্যাচ খেলেছে জাপান। কিন্তু একবারও জয় পায়নি। এই প্রথম। ২০০৩ সালের কনফেডারেশন কাপে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। ম্যাচটি ১-০ গোলে জিতেছিল কলম্বিয়া। ২০০৭ সালে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হয়। ওই ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। আর ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের সর্বশেষ দেখায় ৪-১ গোলে জিতেছিল কলম্বিয়া।
‘এইচ’ গ্রুপের অন্য খেলায় রাত ৯টায় মস্কোয় মুখোমুখি হবে সেনেগাল ও পোল্যান্ড।